করোনা মহামারির কারণে আজ সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত, মানবতা বিপর্যস্ত। সে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আমরা যে চিত্রটি দেখছি সেটা হলো মানবতার যে উদাহরণ যেমন দেখছি তেমনি অমানবিকতাও আমরা দেখছি। আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ একেবারেই ছোট্ট একটি দেশ। কিন্তু আমাদের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটির ওপরে। সুতরাং আমরা যে করোনায় স্বাস্থ্যবিধির কথা বলছি সেখানে মানুষ থেকে মানুষের স্বাস্থ্যগত দূরত্ব থাকা জরুরি। সারা পৃথিবীর রাষ্ট্রপ্রধানরা যখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে জীবন বাঁচানো বড় নাকি, অর্থনীতি রক্ষা করা বড়, এই কঠিন প্রশ্নে? তখন শেখ হাসিনা শুরু থেকেই জীবন-জীবিকা দুটোর ওপরই গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রত্যেকটি স্থানেই কিন্তু কিছু রাজনৈতিক বিত্তশালী মানুষ রয়েছে যারা সামগ্রিকভাবে ১০-১২জন মানুষের দুবেলা খাবার যোগাতে পারে। আমরা যদি সামগ্রিকভাবে এসব ছোট্ট জিনিষগুলো করতে পারতাম সরকারের পাশাপাশি তাহলে এই করোনা সংক্রমণের হারটা অনেক কমিয়ে আনা যেতো।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪১৪তম পর্বে বুধবার (২৮ জুলাই) আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন-পিএসসি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, গবেষক ও লেখক মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপ কমিটির সদস্য, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, করোনায় মানবিকতা নিয়ে আজকের বিজ্ঞ আলোচকরা বিশদ আলোচনা করেছেন কিন্তু আমি আজকে ফোকাস করবো কিভাবে এই সংক্রমণটা ঠেকানো যায়। আমরা ৯০’র দশকে যখন রাজনীতি করতাম তখন হরতাল করতাম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রাস্তায় বসে থাকতাম যাতে কোন রিকশা না চলে, যাতে কোন মানুষ চলাচল না করতে পারে। সেই কাজটা আমরা করতাম যাতে সফল একটা হরতাল হতে পারে। এই উদাহরণটা আনছি একটা কারণে। আজকে এই সময়ে সেই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি রাজনৈতিক সংগঠন, অনেকবেশী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন অলিতে গলিতে জন্ম নিয়েছে। তাদের সবারই লক্ষ্য মানুষের উপকার করা। তারা যদি সেই সময়কার হরতালে মতো মানুষের চলাচল এখন নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি। এবং প্রত্যেকটি স্থানেই কিন্তু কিছু রাজনৈতিক বিত্তশালী মানুষ রয়েছে যারা সামগ্রিকভাবে ১০-১২জন মানুষের দুবেলা খাবার যোগাতে পারে।
আমরা যদি সামগ্রিকভাবে এইসব ছোট্ট জিনিষগুলো করতে পারতাম সরকারের পাশাপাশি তাহলে এই করোনা সংক্রমনের হারটা অনেক কমিয়ে আনা যেতো। এরচেয়ে বড় মানবিকতা আর হতে পারেনা। করোনা সংক্রমণ কমানোই সবচেয়ে বড় মানবিকতা। আমি এটা হলফ করে বলতে পারি একবিংশ শতাব্দীতে কোন মানুষ খাদ্যের অভাবে মারা যাবেনা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা রয়েছে দেশে-বিদেশে। কিন্তু অক্সিজেনের অভাবে মানুষ কিন্তু মৃত্যুবরণ করছে। বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজার পেরিয়েছে। আমার মনে আছে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ আমি যখন ফিল্ড হসপিটাল করার স্বপ্ন করেছি তখন সারা বিশ্বে এই করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ হাজার। আজকে সেই সংখ্যা ৪০ লাখের উপরে। এই যে ভয়াবহতা এটা ঠেকানোর জন্য সরকারের পাশাপাশি আমরা যারা সমাজের দায়িত্ববান মানুষ আছি তাদের কাজ করতে হবে। আপনি যদি দেশ প্রেমিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার এলাকায় যদি করোনা সংক্রমণ রোধে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন তাহলে এর থেকে বড় দেশপ্রেম আর হতে পারে না।